করোনা ভাইরাসঃ বাংলাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ, শিশুরা কেমন আছে।

করোনা ভাইরাসঃ বাংলাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ, শিশুরা কেমন আছে।

বাংলাদেশে করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সরকার ১৭ মার্চ ২০২০ খ্রীঃ থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহ সকল প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ রেখেছেন। মাঝে কিছু এসাইনমেন্ট, ফোনে , টেলিভিশনে শিক্ষা কার্যক্রম এ শিক্ষার্থীদের সংযোগ এর মাধ্যমে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যলয়ের শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের বইয়ের সাথে সম্পৃক্ত রাখতে চেষ্টা করা করে যাচ্ছেন। এ ছাড়াও বেশ কিছু শিক্ষক ব্যক্তিগত উদ্যোগে বা দলীয় উদ্যোগে ফেজ বুকে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম, ম্যসেঞ্জার গ্রুপে, জুম, গুগল ক্লাস রুম ও গুগল মীট  এর মাধ্যমে পাঠ দান কার্যক্রম চালিয়ে গেছেন। কিন্তু তাতে একট অংশ শিক্ষা গ্রহণ থেকে সম্পূর্ন দূরে রয়েছে। কেউ অন লাইনে সংযোগে থেকে বেশি সুবিধা পেয়েছে কেউ কম সুবিধা পেয়েছে। যেমনঃ শহরের আর্থিক সক্ষম পরিবারের শিক্ষার্থীরা অন লাইনের সুযোগ বেশি পেয়েছে, গ্রামের শিক্ষার্থীরা কম সুবিধা পেয়েছে; এটা বাস্তবতা। আমরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিভাবকদের সাথে আলাপ করে যা বুঝতে পারলাম তা হলো তারা চায় স্কুল খুলে দিক। আসলে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা, বিনোদন এর বড় মাধ্যম, কোন কোন ক্ষেত্রে এক মাত্র মাধ্যম এই সব বিদ্যালয়। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ ভারত সহ বিভিন্ন দেশে অধিক মাত্রায় আঘাত হেনেছে। কোরোনা ভাইরাস আরও শক্তিশালী রূপ নিয়েছে। বাংলাদেশও এর প্রভাব পড়েছে। তাই এখন পর্যন্ত বিদ্যালয় খুলে স্বাভাবিক পাঠ দান কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হয় নাই। আসল কথা হচ্ছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যলয়ের শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় ভালো নাই।

ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যলয়ের প্রধান শিক্ষক এলিনা পারভীন বলেন দীর্ঘ সময় স্কুল বন্ধ থাকায় শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশের উপর প্রভাব পড়ে। শিশুরা বিদ্যলয়ে শুধু লেখাপড়াই করে না। এখানে তারা লেখাপড়ার পাশাপাশি প্রাতিষ্ঠানিক খেলাধুলার পাশাপাশি নিজেরা নিজেরা বিভিন্ন খেলাধুলা করে থাকে যা তাদের সামাজিক, শারীরিক ও মানসিক বিকাশে ভূমিকা রাখে। বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশুদের মানসিক, সামাজিক ও শারীরিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।  

ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যলয়ের সহকারি শিক্ষক পারভেজ মাহামুদ এর সাথে এ বিষয়ে কথা হুয়। তিনি বলেন “ প্রাথমিক বিদ্যলয়ে পড়ালেখার পাশপাশি শিশুরা সামজিকতাও শেখে। এক্ষেত্রে শিক্ষক ও সিনিয়র শিকার্থীরা ভূমিকা রাখে। পড়ালেখার কথা বলেন, অন লাইন কার্যক্রমে আমরা ৪০ পার্সেন্ট এর বাশি সংযোগ স্থাপন করতে পারি নাই। তাও আবার অনিয়মিত। আমার বিদ্যলয়ের শিক্ষার্থীদের কথা বলি তাদের শতকরা ৬০ ভাগের বাসায় টিভিই নাই।  যাদের বাসায় আছে তদের বারবার নির্দেশনা দেয়া স্বত্তেও তাদের সংসদ টিভির কার্যক্রমের সাথে সংযুক্ত রাখতে পারি সামান্যই। আর ফেজবুক বা অন্যান্য কার্যক্রমে দুই কি তিন ভাগের বেশি সংযুক্ত করা সম্ভব হয় নাই। ফোনে নির্দেশনা এবং পড়ানোর ক্ষেত্রে বলেন, এ ক্ষেত্রে কিছুটা সংযোগ বজায় রাখা সম্ভব হলেও পড়ালেখায় খুব বেশি ফল পাওয়া যায় না। তবে এটা মন্দের ভালো। এটি শিক্ষদের চালিয়ে যাওয়া উচিত। এতে কিছুটা হলেও শিশুদের সাথে শিক্ষকদের অভিভাবকদের সাথে শিক্ষকদের যোগাযোগ বজায় থাকে।”

বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জসিম উদ্দীন। তিন বলেন, “ আমার বিদ্যলয়ের প্রায় শতকরা ৭০ ভাগ শিশুদের বাসায় টেলিভিশন থাকলেও সংসদ টিভির নির্ধারিত শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ সম্পর্কে আমি সন্তুষ্ট হতে পারি নাই। অভিভাবকের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রেখে যাচ্ছি কিন্তু আশা জাগানোর মত ফল পাচ্ছি না। সরকার সার্বিক বিবেচনা করে যত তাড়াতাড়ি বিদ্যলয় খুলে দেয় ততই শিশুদের জন্য, শিক্ষার জন্য মঙ্গল । মোট কথা বিদ্যলয় বন্ধ থাকায় শিশুদের সার্বিক বিকাশ বিশেষ করে গ্রাম অঞ্চলের শিশুদের বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।”

ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যলয়ের প্রধান শিক্ষক। তিনি জানান, “ এক বছরের বেশি সময় বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিশুদের শিক্ষার পাশাপাশি মানসিক ও সামাজিক বিকাশে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। আমরা শিশুদের বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক সংসদ টেলিভেশনে শিক্ষা কার্যক্রমে সম্পৃক্ত রাখতে চেষ্টা করছি। কিন্তু এতে আমরা শত ভাগ সফল হতে পারি নাই। কারন অনেক অভিভাবকের টেলিভিশন নাই। আবার যাদের আছে তারা সকলে সময় মত দেখে না বার বার বলা সত্তেও । একটি অংশ এ কার্যক্রম থেকে । তাদের সাথে আমরা শিক্ষকরা ফোনে যোগাযোগ করে পাঠ সম্পর্কে ধারনা দিয়ে থাকি। তবে এসব কার্যক্রম এর মাধ্যমে শিক্ষার ঘারতি পূরনের চেষ্টা করা হচ্ছে।” বিদ্যালয় খোলার ব্যপারে তিনি সতর্ক জবাব দেন, সরকার সব দিক বিবেচনা করে স্বাস্থ্য বিধি মেনে কখন স্কুল খুলে দিবে সে ব্যপারে আমরা প্রস্তুত আছি।

ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া গ্রামের রহিমা বেগমের দুই সন্তান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে; এক মেয়ে পড়ে প্রথম শ্রেণিতে আর এক মেয়ে পড়ে তৃতীয় শ্রেণিতে। তিনি বলেন তার মেয়ে টেবিলে বসার অর্থাৎ লেখাপড়ার আগ্রহ একদম হারিয়ে ফেলেছে। সারাদিন বাড়িতে থাকায় মেজাজ খিটখিটে হয়ে পড়েছে। সারদিন স্কুলে থাকার সময় ওদের মধ্যে এক ধরনের শৃঙ্খলা ছিল। এতে তাদের পড়ালেখাএ পাশপাশি সামাজিক বিকাশ বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে।

ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার দপদপিয়া গ্রামের সুমা বেগমের দুই সন্তান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে; এক মেয়ে পড়ে পঞ্চম শ্রেণিতে আর এক ছেলে পড়ে তৃতীয় শ্রেণিতে। তিনি স্কুল খোলার ব্যপারে আগ্রহী। তিনি বলেন “স্কুল খুলে দেন তা না হলে ছেলে মেয়ারে একেবারে গোল্লায় যাবে। বাড়িতে একেবারেই পড়তে বসাতে পারি না”

সম্প্রতি পিপিআরসি ও ব্রাক ইনস্টিটিউট এর গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এর যৌথ গবেষণায় উল্লেখ করে “করোনা মহামারির বর্ত্মান পরিস্থিতিতে দেশের প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের ৯৭ দশমিক ৭ শতাংশ অভিভাবক তাদের সন্তান্অদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে চায়।” এই গবেষণায় আরো জানায় দেশের প্রাথমিক বিদ্যলয়ের ১৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পড়াশুনার বাহিরে আছে। গবেষণায় আরো জানায় শিশুরা মানসিক চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। অভিভাবকদের দেয়া তথ্য মতে মানসিক চাপের লক্ষণগুলো হলো – অধৈর্য ভাব, রাগ বা উগ্রভাব, ভয় পাওয়া ইত্যাদি।

অভিভাভক ও শিক্ষার্থীরা যায় তাদের প্রিয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিক। কিন্তূ শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ঝুঁকি বিবেচনা করে সরকার এখনও বিদ্যালয় খুলে দিতে পারে নাই। প্রশ্ন এ ভাবে আর কত দিন। অচিরেই বিদ্যালয় খুলে দিবে এটা সকলের প্রত্যাশা। করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে গঠিত জাতীয় কমিটির পরামর্শ ও আন্তর্জাতিক বিষয় বিবেচনা করে সরকার খুব শিগ্রই বিদ্যালয় খুলে দিবে এ প্রত্যাশা।

কিন্তু যতদিন বিদ্যালয় খোলা সম্ভব হচ্ছেনা শিক্ষকগণকে আরও আন্তরিকতার সাথে শিক্ষার্থী, অভিভাবকদের সাথে যোগাযোগ বজায় রেখে পাঠ দান কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। এই যোগাযোগ ফোনে আলাপের মাধ্যমে ও স্বাস্থ্য বিধি মেনে সরাসরি হতে পারে। নিয়মিত এসাইনমেন্ট প্রদান ও তা সম্পাদনের জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ যে ভাবে সম্ভব চালিয়ে যেতে হবে।

---------------------------

 

 

Post a Comment

0 Comments